চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সারাদেশে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
গত ৪ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে রাজপথ উত্তাল। ‘বাংলা ব্লকেড’, বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান, সমাবেশসহ আন্দোলনকারীদের নানান কর্মসূচি চলছে একের পর এক। আন্দোলনের ১২তম দিনে সোমবার (১৫ জুলাই) প্রথম বড় ধরনের সহিংসতা হয় এই আন্দোলনকে ঘিরে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে শত শত মানুষ আহত হয় এদিন।
তবে আন্দোলনের ১৩তম দিনটি হলো আরও রক্তক্ষয়ী। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত। আহত হয়েছেন অগণিত।
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর মুরাদনগরে এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স ২৪। তার পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলি লাগে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী। আরেকজন পথচারী। অন্যজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীসহ তিনজন মারা গেছেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের সঙ্গে মারামারিতে আহত অপর দুজন ছাত্রকে হাসপাতালে আনার পর তাদের দুই নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলো। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেরোবিতে অন্যতম সমন্বয়ক ছিলো আবু সাঈদ।
দুপুরে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় গেটে জড়ো হলে তাদের ওপর রাবার বুলেট ও গুলি চালায় পুলিশ। এতে আবুদ সাঈদ নামের ওই শিক্ষার্থী নিহত হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসে। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ, শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
এদিকে, রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন, রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে মনির নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী নাকি পথচারী এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষের একপর্যায়ে মনিরকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পপুলার মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, সন্ধ্যা ৭টা পাঁচ মিনিটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে পপুলার হাসপাতাল থেকে ঢামেকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।